ঠাণ্ডা ও সর্দি জ্বরের ঘরোয়া সমাধান
জাকারিয়া: দ্রুত বদলাচ্ছে আবহাওয়া। মৌসুম বদলের এই সময়ে অনেকেই বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগে থাকেন এর মধ্যে জ্বর, ঠাণ্ডা, সর্দি-কাশি অন্যতম। আমাদের কাছে এই সমস্যাটি ঠাণ্ডা ও সর্দি জ্বর নামে পরিচিত।
এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আমরা সাধারণত নানা ওষুধের উপর নির্ভর করে থাকি। তবে আমেরিকার বিখ্যাত মায়ো ক্লিনিকের দেয়া তথ্য মতে, সাধারণ ঠাণ্ডা এবং সর্দি জ্বরের কোন চিকিৎসা নেই। এটি এমনিতেই সেরে যায়।
ঠাণ্ডা জ্বর ও সর্দি হয়ে থাকে ভাইরাসের ইনফেকশনের কারণে তাই অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারেও কোন সুফল পাওয়া যাবে না, কারণ অ্যান্টিবায়োটিক শুধুমাত্র ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে আপনি শুধুমাত্র উপসর্গগুলি কম করার জন্য ওষুধ খেতে পারেন। যেমন জ্বর বা মাথা ব্যথা কমাতে প্যারাসিটামল ব্যবহার করা যেতে পারে।
তবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা ভেবে অনেকেই অ্যালোপ্যাথি ব্যবহার করতে চান না, তারা বেছে নেন প্রাকৃতিক সমাধান। ওষুধ আবিষ্কার হওয়ার আগে থেকে মানুষ বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপায় ব্যবহার করে জ্বর, ঠাণ্ডা, সর্দি-কাশি সহ অনেক রোগ নিরাময় করে আসছেন।
আসুন জেনে নিই প্রাকৃতিক উপায়ে জ্বর, ঠাণ্ডা, সর্দি-কাশি নিরাময়ের কিছু ভেষজ সমাধান সম্পর্কে
ঠাণ্ডা সারাতে মধুর ব্যবহার
ঠাণ্ডা, সর্দি-কাশির সমস্যা সমাধানের জন্য মধু খুবই উপকারী। গবেষণায় দেখা গেছে কফ নিরাময়েও এটি বেশ কার্যকর। উষ্ণ গরম পানিতে মধু মিশিয়ে নিয়মিত খেতে পারেন। তাছাড়া প্রতিদিন এক চামচ করে মধু খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন।
এছাড়া পবিত্র কোরআন মাজিদেও মধুর উপকারিতার কথা বলা আছে। মধুতে মানুষের জন্য রয়েছে রোগের প্রতিকার- সূরা আন-নাহাল।
হলুদ-দুধ ঠাণ্ডা ও সর্দি জ্বরের প্রথাগত চিকিৎসা
গরম দুধে কাঁচা হলুদ জাল করে খেতে পারেন। দীর্ঘদিন ধরে বাংলার থেকে গ্রামে গঞ্জে ঠাণ্ডা ও সর্দি জ্বর সারাতে এই দাওয়াই ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
হলুদকে বলা হয় প্রাকৃতিক অ্যান্টি ভাইরাল উপাদান। এটি আপনাকে ঠাণ্ডা থেকে দ্রুত মুক্তি পেতে সহায়তা করবে। রাতে ঘুমানোর আগে হলুদ দুধ পান করুন।
তুলসি পাতা ঠাণ্ডা জ্বরে অত্যন্ত কার্যকর
প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবে তুলসী পাতার ব্যবহার হয়ে আসছে। তুলসী পাতা প্রচুর অক্সিজেন উৎপন্ন করে যা জ্বরের ও কাশির জন্য অনেক উপকারী।
এক চা চামচ আদার রসের সাথে তুলসী পাতার রস ও মধু মিশিয়ে খেলে দীর্ঘস্থায়ী কাশির উপশম হয়।
সর্দি-কাশি নিরাময়ে আদার উপকারিতা
ঠাণ্ডা বা সর্দি-কাশির প্রতিষেধক হিসেবে আদার কার্যকারিতা অনেক। আদা চিবিয়ে খেলে বা আদা দিয়ে ফোটানো গরম পানি পান করলে তাৎক্ষণিক গলা খুসখুস ও গলা ব্যথা নিরাময় হয়। এটি আপনাকে সর্দি-কাশি থেকে পরিত্রাণ পেতেও সহায়তা করবে।
আদাতে বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
আদা চা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। এটি একদিকে যেমন সুস্বাদু তেমনি ঔষধি গুণেও ভরপুর।
ঠাণ্ডার উপশমে লং বা লবঙ্গ
লং জ্বর, ঠাণ্ডা, সর্দি-কাশির ওষুধ হিসেবে বহু বছর ধরেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। লং চিবিয়ে অথবা লং এর রস খেলে কফ, সর্দি, কাশি, গলা ফুলা আর শ্বাসকষ্টে সুফল পাওয়া যায়।
আপনি চাইলে লাল চায়ে লবঙ্গ মেশাতে পারেন।
থানকুনি পাতা
২ চামচ থানকুনি পাতার রসের সঙ্গে অল্প চিনি মিশিয়ে খেলে কাশি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। একটানা এক সপ্তাহ খেলে কাশির কোন চিহ্নই থাকবে না।
ঋতু পরিবর্তনের সময় যে জ্বর হয় তা সারানোর জন্য থানকুনি পাতা বিকল্প নেই। ১ চামচ থানকুনি ও ১ চামচ শিউলি পাতার রস সকালে খালি পেটে খেলে অল্প সময়েই জ্বর সেরে যায়। শারীরিক দুর্বলতা থেকেও মুক্তি মেলে।
টক দই
এটি একটি পুষ্টিকর খাবার, এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল ও আমিষ। টক দই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এজন্য জ্বর, ঠাণ্ডা, সর্দি-কাশি থেকে বাঁচতে নিয়মিত টক দই খাওয়া উচিৎ।
এছাড়া জ্বরের সময় প্রচুর পরিমাণে পানি, ফল এবং ফলের রস খাবেন।
গরম পানির ভাপ
কোন বড় গামলায় গরম পানি নিয়ে তাতে নিশ্বাস নিন। এটি সর্দি গলিয়ে বের করে দিতে সহায়তা করবে। তাছাড়া এটি শুকনো কফ গলাতেও সহায়তা করে।
লবণ পানিতে কুলকুচি
হালকা উষ্ণ পানিতে এক চিমটি লবণ মিশিয়ে সেই পানি দিয়ে কুলকুচি করুন। এটি আপনার গলা ব্যথা ও খুসখুস করা উপশম করবে।
প্রেস/জেএ/এনজে
তথ্যসূত্র: মায়ো ক্লিনিক, টাইমস অব ইন্ডিয়া এবং হেলথ লাইন।