ডাবের পানির উপকারিতা, পুষ্টিগুণ ও ব্যবহার
জাকারিয়া: গ্রীষ্মের প্রচন্ড দাবদাহে যখন মানুষের শরির ক্লান্ত হয়ে যায় তখন ডাবের পানি সব ক্লান্তিকে নিমিষেই দূর করে দেয়। ডাবে রয়েছে অনেক উপকারিতা।
ডাবের পানি খেতে মিষ্টি ও পুষ্টিগুনে অনন্য। ছোট থেকে বৃদ্ধ সবাই ডাব, ডাবের পানি, নারকেল খেতে পছন্দ করে। ডক্তাররা পানিশূন্যতা পূরণের জন্য ডাবের পানি খেতে বলেন।
ডাব দিনদিন বহুমুখি খাবারে পরিনত হয়ে যাচ্ছে। শুধু খাবার জন্য নয়, রুপচর্চা বা বিভিন্ন প্রসাধনী তৈরিতে ডাব ব্যবহার হয়ে থাকে। ডাবে নারিকেলের তুলোনায় বেশি পানি থাকে এবং ভেতরে নরম জেলের মত অপুষ্ট নারকেল থাকে।
ডাবের পুষ্টিগুন
একটি ডাবে পানি থাকে ৯৫% তাছাড়াও রয়েছে নাইট্রোজেন, ফসফরিক এসিড, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড, আয়রন, শর্করা, সোডিয়াম, কপার, ফাইবার এবং সেলেনিয়াম।
ডিহাইড্রেশন বা পানি স্বল্পতা পূরণে ডাবের পানি উপকারী
ডাব বা নারকেল দুটোর পানি খুবই স্বাস্থ্য বর্ধক। ডাবের পানি ইলেক্ট্রলাইটের অন্যতম উৎস। ইলেক্ট্রলাইট শরীরকে সঠিক ভাবে হাইড্রেটেড রাখার জন্য অত্যন্ত উপকারী। শরীর হাইড্রেড থাকলে পেশী ও স্নায়ুগুলো যথাযথ ভাবে কাজ করতে পারে।
এজন্য টিভেতে যেসকল কোমল পানিয় বা এনার্জি ড্রিংকের এড দেখি তা না খেয়ে ডাবের পানি খেলে অনেক বেশি উপকার হবে। যারা নিয়মিত ব্যায়ামে করেন তারা ব্যায়ামের পরে ডাবের পানি খেতে পারেন।
হার্টের জন্য ডাবের পানির উপকারিতা
ম্যাটাবোলিক সিনড্রম হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। ডাবের পানিতে এধরনের সিনড্রম কমানোর দারুণ ক্ষমতা রয়েছে। ম্যাটাবোলিক সিনড্রমকে চিহ্নিত করা হয় উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে শর্করা, ট্রাইগ্লিসারাইড এবং এলডিএল বা খারাপ কোলেস্টোরেলের মাত্রা দিয়ে। তাছাড়া এইচডিএল বা ভালো কলেস্টোরেল কমে যায় ও পেটে ফ্যাট বেড়ে যায়।
গবেষণায় দেখা গেছে ডাবের পানি খেলে তা রক্ত চাপ, রক্তে শর্করা, ট্রাইগ্লিসারাইড ও ইনসুলিনের মাত্রা উন্নত করে। ডাবের পানিতে পরিমিত মানে এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় হৃদরোগের জন্য ডাব খুবই উপকারী।
ডায়বেটিসের জন্য ডাবের পানি কার্যত উপকারী
গবেষকদের মতে ডাবের পানি রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে পারে। যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের অন্যান্য শারিরিক সমস্যা দূর করতেও ডাবের পানি কার্যকরী। এটি ম্যাগনেসিয়ামের ভালো উৎস যা ইনসুলিনের সংবেদনশীলতাকে বাড়িয়ে তোলে। এতে থাকা ফাইবার হজম প্রক্রিয়াকে গতিশীল রাখে। ফাইবার যুক্ত খাবার ডায়াবেটিস রোগিদের জন্য খুবি উপকারী।
কিডনিতে পাথর প্রতিরোধে সহায়ক ডাবের পানি
কিডনিতে যাতে পাথর না হয় এজন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা জরুরি। নরমাল পানিই এরজন্য যথেষ্ট তবে কিছু গবেষকদের মতে ডাবের পানি পাথর না হওয়ার জন্য আরো ভালো কাজ করে।
ক্যালসিয়াম, অক্সালেট এবং অন্যান্য যৌগগুলি মিশে প্রসাবের আস্তর তৈরি করে। এগুলোই পরে পাথর তৈরি করে। ডাবের পানি কিডনি ও মূত্রনালির অন্যান্য অংশগুলিতে এমন আস্তর হওয়া আটকাতে পারে। ডাবের পানি প্রসাবে র্যাডিকেল উৎপাদন করতেও বাধা সৃষ্টি করে থাকে।
রক্তচাপ কমাতে ডাবের পানির উপকারিতা
ডাবের পানি রক্তচাপ কমানোর জন্য দূর্দান্ত হয়ে থাকে। ডাবের পানিতে পর্যাপ্ত পরিমানে পটাসিয়াম আছে, পটাসিয়াম রক্তচাপ কমাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। ডাবের পানিতে আছে এন্টি-থ্রম্বোটিক ক্রিয়াকালাপ যা রক্তের জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।
পুষ্টির প্রয়জনীয়তা পূরণ করতে পারে ডাবের পানি
ডাবের পানি কার্বোহাইড্রেড এবং সম্পূর্ণ চর্বিমুক্ত হয়ে থাকে, ক্যালোরির পরিমাণও খুবি কম। এছাড়াও এতে এসকরবিক এসিড, ভিটামিন-বি ও প্রোটিনের পরিমাণ বেশি। এজন্য ডাবের পানি আপনার প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে পারে।
এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাদ্য সরবরাহ করে
ডাবের ভেতরে থাকা জেলির মতো নরম মাংস অক্সিডেটিভ টিস্যু গুলিকে ক্ষতি হওয়া থেকে রক্ষা করে। ডাবের এ অংশটি স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, প্রোটিন, বিভিন্ন ভিটামিন এবং খনিজের অন্যতম উৎস। এটি খেতেও সুস্বাদু, এজন্য আমরা ডাবের ভেতরের এ অংশটুকুও তৃপ্তি নিয়ে খেয়ে থাকি।
সৌন্দয্য বৃদ্ধি ও ত্বকের যত্ন নিতে ডাবের পানি উপকারী
ডাব নারিকেলে পরিনত হওয়ার পরে এর থেকে স্বাস্থ্যকর নারিকেল তেল তৈরি করা হয়ে থাকে। নারিকেলের তেল সমগ্র পৃথিবী জুরেই চুলের যত্ন নিতে ব্যবহার করা হয়। এর তেল মানুষের ত্বক, মাথার ত্বক ও চুলের যত্নে ময়শ্চরাইজার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ডাবের ভেতরের পাতল অংশ একটু থেতলে নিলে তা প্রাকৃতিক সানস্ ক্রিম হিসেবে ব্যবহার করা যায়। প্রাচীনকালথেকেই নারিকেলের তেল খাওয়া, ওষুধ তৈরি ও রুপচর্চায় ব্যবহার হয়ে আসছে।
নারিকেলের ১০টি স্বাস্থ্য উপকারিতা
- ১. নারিকেল এন্টিব্যাক্টেরিয়াল, এন্টি-ভাইরাল, এন্টি-ফাঙ্গাল এবং পরজীবি মুক্ত। যার জন্য নারিকেল আপনার ইমিউন সিস্টেমকে স্বাস্থ্যকর করে তোলে।
- ২. নারিকেল দ্রুত শক্তি সরবরাহের প্রাকৃতিক উৎস। যা আপনার শরির এবং এথলেটিক কর্মক্ষমতাকে বাড়ায়।
- ৩. নারিকেলে থাকা পুষ্টি, ভিটামিন এবং খনিজ হজম ক্ষমতাকে বাড়ায়।
- ৪. ইনসুলিন এবং ডায়াবেটিসের সাথে সর্ম্পকিত লক্ষণগুলি উন্নত করে।
- ৫. ফ্রিরেডিক্যাল অপসারনের মাধ্যমে দেহকে ক্যান্সারের হাত থেকে রক্ষা করে সাহায্য করে।
- ৬. হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং ভালো কোলেস্টোরেলের(এইচডিএল) মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
- ৭. থাইরয়েড ফাংশন পুনরুদ্ধার ও সমর্থনে সাহায্য করে।
- ৮. কিডনিরোগ এবং মুত্রাশয়ের অসুখ থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে।
- ৯. ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- ১০. রুপচর্চায় উপকারি ভূমিকা রাখে নারিকেল।
তথ্যসূত্র: হেলথলাইন.কম ও সানওয়ারিওর
প্রেস/জেএ/এনজে