জাকারিয়া: দুধের উপকারিতা এবং পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আমাদের মধ্যে সঠিক ধারণা নেই বললে ভুল হবে না। এজন্য অনেকের কাছেই দুধ খুবি পছন্দের আবার এমন অনেক মানুষ আছে যারা দুধ খেতে চায় না, বিশেষ করে বাচ্চারা।
আবার অনেকের মধ্যে ধারণা আছে যে দুধ খেলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে, ওজন বেড়ে যায় তাড়াতাড়ি। এই ধারণাগুলোর অধিকাংশই ভুল। যে কোন খাবারই অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়া ভালো নয়। ঠিক তেমনি ভাবে দুধও আপনাকে পরিমাণ মত নিয়মিত খেতে হবে।
দুধের পুষ্টিগুণ
ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন- এ, ভিটামিন- ডি, ফসফরাস-বি ১২, রাইবোফ্লভিন, নিয়াসিন এবং প্রোটিন। তাছাড়া দুধের মধ্যে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট এবং ফ্যাটের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রয়েছে।
আসুন জেনে নেই দুধের উপকারিতা সম্পর্কে।
হাড়কে মজবুত করতে সহায়তা করে
দুধে থাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম যা হাড়কে মজবুত করার অন্যতম সেরা উৎস। দুধ হাড়ের প্রয়োজনীয় ভিটামিন- ডি, ক্যালসিয়াম, প্রোটিন যোগান দেয়।
এমন অনেক শাক-সবজি, ফল-মূল আছে যাতে এই পুষ্টি উপাদান গুলো থাকে তবে দুধের তুলনায় সেগুলো খুবই অল্প। পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম আপনার হাড়কে শক্তিশালী রাখে এবং হাড়ের ক্ষয়, সহজে হাড় ভাঙা কমাতে পারে।
ত্বকের যত্ন নিতে দুধ উপকারী
বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের মুখে একটা ছাপ পরতে শুরু করে। অনেকেই বয়সের ছাপ নিয়ে ভুগেন দুশ্চিন্তায়, বিশেষত মহিলারা। দুধে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন যা ত্বকের সৌন্দর্যকে ধরে রাখে।
পুষ্টিবিদদের মতে দুধে থাকে রেটিনল যা এন্টি এজিং ও এন্টি অক্সিডেন্ট। এছাড়া দুধে থাকা ভিটামিন- ডি এন্টি এজিং যা ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি থেকে সুরক্ষা দান করে।
পেশি গঠনে ভূমিকা রাখে
শারীরিক ব্যায়াম বা খেলাধুলা করার পর পেশিগুলোতে একধরনের ক্লান্তি দেখা দেয়। অনুশীলন করার পরে এক গ্লাস দুধ আপনার পেশি গুলোকে পুনরায় চাঙা করে তুলবে।
মাংস পেশির বৃদ্ধিতে দুধের ভূমিকা দুর্দান্ত। দুধে থাকা প্রোটিনের ফলে এমনটা হয়। গরম দুধ শরীরের ব্যথাকে কমিয়ে পেশি গুলোকে তরান্বিত করে।
ওজন কমাতে দুধ
অনেকে মনে করেন দুধ খেলে ওজন বেড়ে যায় তাড়াতাড়ি। ব্যাপারটা আসলে এমন না। অতিরিক্ত যে কোন খাবারই হতে পারে আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির কারণ। তাই দুধ পরিমাণ মত খেতে হবে নিয়মিত।
পরিমিত দুধ খেলে ওজন বাড়ে না উল্টো সহনশীল থাকে। অন্যসব খাবার খেয়ে ওজন কমানোর চাইতে প্রতিদিন এক গ্লাস দুধ আপনার জন্য বেশি উপকারী। কারণ, দুধ আপনার অন্যসব খাবারের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করবে এবং এতে করে ওজন বাড়ার মত ক্ষতি হবে না।
মানসিক চাপ কমায়
ভিটামিন এবং খনিজ মানুষের স্ট্রেস বা মানুষিক চাপ কমায়। দুধের পুষ্টিগুণের মধ্যে এদুটি অন্যতম। সারাদিনের কাজের প্রেশার দিন শেষে মানুষকে মানসিক ভাবে ক্লান্ত করে দেয়। এক গ্লাস গরম দুধ মানসিক চাপকে কমিয়ে দিতে পারে এবং স্নায়ুকে শান্ত রাখতে সহায়তা করে।
ডিহাইড্রেশন এবং কোষ্ঠকাঠিন্য রোধে দুধ উপকারী
যাদের ডিহাইড্রেশনের সমস্যা আছে তারা নিয়মিত দুধ খেতে পারেন। দুধের পুষ্টি উপাদান শরীরকে রি-হাইড্রেট করে তোলে।
যারা কোষ্ঠকাঠিন্যতায় ভুগছেন তাদের জন্য দুধ মহা ঔষধ। রোজ রাতে গরম দুধ খেয়ে ঘুমাতে গেলে কোষ্ঠকাঠিন্য কমে যাবে।
দাঁতের জন্য উপকারী
দুধে থাকা ক্যালসিয়াম দাঁতকে মজবুত করে। দাঁত পরা কমাতে ও দাঁতের ক্ষয়রোধে দুধের তুলনা নেই।
পেটের সমস্যার জন্য উপকারী
দুধ পাকস্থলিকে ঠান্ডা রাখে এবং খাবার হজমে সহায়তা করে। মেয়েদের পিরিয়ডের সময় পেট ব্যথা হয়। গরম দুধ খেলে এ ধরনের ব্যথা কমে যাবে।
দুধের উপকারিতা এবং পুষ্টিগুণ বলে শেষ করা যাবে না। তাছাড়া দুধ খেলে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে। এটি দৃষ্টি শক্তি বাড়াতেও সাহায্য করে।
দুধ নিয়ে হয়েছে হাজার হাজার গবেষণা এবং এসব গবেষণা প্রমাণ করে যে দুধে রয়েছে অনেক রোগের প্রতিকার। কিছু গবেষক মনে করেন দুধ খেলে ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমে যায়, তবে এ বিষয়ে আরও গবেষণার অবকাম রয়েছে।
আরও পড়ুন: কালোজিরার উপকারিতা ও ব্যবহার
তথ্যসূত্র: হেলথলাইন এবং লাইফহ্যাক
অনলাইনপ্রেস/জেএ/এনজে