আজঃ শুক্রবার ৩১-১০-২০২৫ ইং || খ্রিষ্টাব্দ

মানবতার ছদ্মবেশে হত্যাযজ্ঞ, আমেরিকার বিশ্ব রাজনীতি __মুফতী ওলিউল্লাহ্ মুহাম্মাদ

  • আপডেটেড: সোমবার ২২ Sep ২০২৫
  • / পঠিত : ১৩০ বার

মানবতার ছদ্মবেশে হত্যাযজ্ঞ, আমেরিকার বিশ্ব রাজনীতি __মুফতী ওলিউল্লাহ্ মুহাম্মাদ


মানবসভ্যতার ইতিহাসে শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো দুর্বল রাষ্ট্রকে শোষণ করেছে, আধিপত্য বিস্তার করেছে। কিন্তু গত এক শতাব্দীর প্রেক্ষাপটে যদি আমরা বিশ্ব রাজনীতিকে দেখি, তবে একটি রাষ্ট্র সর্বত্র রক্ত ঝরিয়ে, আগ্রাসন চালিয়ে, মানবতার নামে মানবতাকে ধ্বংস করে চলেছে—সে হলো আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই আমেরিকা নিজেকে বিশ্বের একমাত্র “রক্ষক” এবং “শান্তির দূত” হিসেবে তুলে ধরতে শুরু করে। কিন্তু বাস্তবে তাদের প্রতিটি পদক্ষেপ ছিলো রক্তলোলুপ আধিপত্যবাদ। “গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা” বা “মানবাধিকার রক্ষা”র নামে তারা দুর্বল রাষ্ট্রগুলোতে আক্রমণ চালিয়েছে। আসলে মূল উদ্দেশ্য ছিলো প্রাকৃতিক সম্পদ দখল, বিশেষ করে তেল ও গ্যাস, নিজেদের অস্ত্র ব্যবসা সচল রাখা এবং ভূ-রাজনৈতিক দখলদারিত্ব নিশ্চিত করা।

ভিয়েতনাম যুদ্ধ ছিলো আমেরিকার রক্তপিপাসার এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। ১৯৫৫ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত চলা এই যুদ্ধে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ নিহত হয়। শিশুদের ওপর ন্যাপাম বোমা বর্ষণ, গ্রামাঞ্চলে রাসায়নিক স্প্রে করে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে বিকলাঙ্গ করে দেওয়া—এসব মানবতাবিরোধী অপরাধ ইতিহাসের কলঙ্ক হয়ে আছে। এর পর আফগানিস্তানে ২০০১ সালের পর শুরু হয় তথাকথিত “সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ”। টানা দুই দশকের আগ্রাসনে লক্ষাধিক নিরীহ নারী-শিশু নিহত হয়, কোটি মানুষ গৃহহীন হয়। ২০০৩ সালে “গণবিধ্বংসী অস্ত্রের” মিথ্যা অজুহাতে ইরাকে হামলা চালিয়ে আমেরিকা লাখ লাখ মানুষের জীবন কেড়ে নেয়। জাতিসংঘের অনুমোদন ছাড়াই চালানো এই যুদ্ধের পরিণতিতে ইরাক আজও ধ্বংসস্তূপ, আর পুরো অঞ্চল অস্থিতিশীল।

শুধু ইরাক-আফগানিস্তান নয়, আমেরিকা মধ্যপ্রাচ্যের সর্বত্র রক্ত ঝরিয়েছে। ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের পেছনে সবসময় আমেরিকার প্রত্যক্ষ সহযোগিতা কাজ করছে। ইসরায়েলি সেনারা যখন শিশু হত্যা করে, ঘরবাড়ি ধ্বংস করে, গাজায় গণহত্যা চালায়—তখন তাদের অস্ত্র জোগাচ্ছে আমেরিকা। আবার সিরিয়ায় “সন্ত্রাস দমনের” নামে বোমাবর্ষণ করে লাখো নিরীহ মানুষ হত্যা করা হয়েছে। লিবিয়ায় গাদ্দাফি সরকার উৎখাতের জন্য আমেরিকা সরাসরি হামলা চালায়, যার ফলে এক সমৃদ্ধ রাষ্ট্র গৃহযুদ্ধে ভেঙে পড়ে এবং এখনো পুনর্গঠিত হতে পারেনি।

এশিয়া, আফ্রিকা কিংবা লাতিন আমেরিকা—যেখানেই আমেরিকার পদচারণা, সেখানেই রক্ত, অশান্তি আর ধ্বংসস্তূপের স্তুপ। চিলি, ভেনিজুয়েলা, কিউবা, নিকারাগুয়া—সবখানেই তারা ষড়যন্ত্র করেছে, অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে, স্বৈরশাসক কায়েম করেছে। গবেষক ও বিশ্লেষকদের মতে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আজ পর্যন্ত আমেরিকার আগ্রাসন, যুদ্ধ ও ষড়যন্ত্রে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে দুই কোটিরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।

তবুও আমেরিকা নিজেকে “মানবাধিকারের রক্ষক” ও “গণতন্ত্রের ধারক” হিসেবে বিশ্বে প্রচার করে যাচ্ছে। বাস্তবে তারা হলো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রক্তপিপাসু রাষ্ট্র। তাদের পদচারণা যেখানে পড়ে, সেখানেই আগুন জ্বলে ওঠে, সেখানেই নিরীহ মানুষ খুন হয়, সেখানেই অশান্তি জন্ম নেয়। তাই বলা যায়, আজকের পৃথিবীতে অশান্তির মূল কারণ হলো আমেরিকা।



নিউজ কমেন্ট করার জন্য প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে লগইন করুন

Copyright © 2025. All right reserved OnlinePress24
Theme Developed BY Global Seba