আজঃ বৃহস্পতিবার ৩০-১০-২০২৫ ইং || খ্রিষ্টাব্দ

দারুল উলুম দেওবন্দের দেড়শ বছরের ইতিহাস

  • আপডেটেড: সোমবার ২২ Sep ২০২৫
  • / পঠিত : ১২৫ বার

দারুল উলুম দেওবন্দের দেড়শ বছরের ইতিহাস

 মূল : দারুল উলুম দেওবন্দ কী জামে ওয়া মুখতাসার তারিখ

লেখক : ড. মাওলানা মুহাম্মদুল্লাহ কাসেমী 


দারুল উলুম দেওবন্দের দেড়শ বছরের ইতিহাসকে একসঙ্গে ধারণ করা মানেই উপমহাদেশের ধর্মীয়, বৌদ্ধিক ও শিক্ষাগত ধারাবাহিকতার এক বিশাল ভাণ্ডারকে মলাটবন্দী করা। ‘দারুল উলুম দেওবন্দ কী জামে ওয়া মুখতাসার তারিখ’ গ্রন্থটি সেই মহাযজ্ঞে এক সুসংবদ্ধ, নির্ভরযোগ্য ও পাঠকবান্ধব প্রয়াস। গ্রন্থটির আরবি, উর্দু, ফার্সিসহ বিভিন্ন ভার্সন থাকলেও বাংলা অনুবাদ প্রকাশিত হলো বেশ দেরিতে। অনুবাদ প্রকাশ হয়েছে ‘দারুল উলুম দেওবন্দ’ নামে।


বইটিতে প্রথমেই চোখে পড়ে এর ঐতিহাসিক শিকড়। প্রতিষ্ঠালগ্ন ১৮৬৬ খ্রি./১২৮৩ হিজরি থেকেই দারুল উলুম সংশ্লিষ্ট সমস্ত কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে সংরক্ষণের যে সংস্কৃতি আকাবির উলামায়ে কেরাম শুরু করেছিলেন, বার্ষিক রিপোর্ট, মাসিক আল-কাসেম, আর-রশিদ, দারুল উলুম, কিংবা সম্মেলনের বিশেষ সংখ্যাগুলো তারই উত্তরাধিকার এই গ্রন্থে দৃঢ়ভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। ইতিহাসকে শুধু স্মৃতিতে নয়, নথিতে ধরে রাখার যে দূরদৃষ্টি অগ্রজদের ছিল, তা আজকের প্রজন্মের জন্য এক বিরল সম্পদ।


গ্রন্থটির অধ্যায় বিন্যাস প্রশংসনীয়ভাবে পরিষ্কার। নয়টি অধ্যায়ে দারুল উলুমের শিক্ষা, ব্যবস্থাপনা, চিন্তা-চেতনা, পাঠ্যক্রম, অবদান, মনীষীগণের জীবন ও কর্ম থেকে শুরু করে সমসাময়িক উন্নয়ন পর্যন্ত এক সুসংগঠিত ধারায় সাজানো হয়েছে। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, ইতিহাসকে চারটি যুগে ভাগ করে বছরভিত্তিক ঘটনাপঞ্জি উপস্থাপন করা হয়েছে—যা পাঠকের কাছে সময়ের পরিক্রমায় প্রতিষ্ঠানের ওঠাপড়াকে অনুধাবন করা সহজ করে দেয়।


এখানে শুধু প্রতিষ্ঠানগত দিক নয়, দারুল উলুমের চিন্তা ও মিশনকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। চতুর্থ ও পঞ্চম অধ্যায়ে শিক্ষাদান পদ্ধতি, ব্যবস্থাপনা, পাঠ্যসূচি থেকে শুরু করে এক্সট্রা-কারিকুলার উদ্যোগ পর্যন্ত যা এসেছে, তা প্রমাণ করে দারুল উলুম কেবল একটি মাদরাসা নয়, সমগ্র মুসলিম সমাজের জন্য একটি বৌদ্ধিক ও আধ্যাত্মিক কারখানা।


ষষ্ঠ অধ্যায়ে দারুল উলুমের অবদান নিয়ে যে ষোলোটি শিরোনামে আলোচনা হয়েছে, তা বইটির প্রাণ। দারুল উলুমকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা আন্দোলন, নেতৃত্ব, দ্বীনি খেদমত—সবকিছুরই এখানে পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা পাওয়া যায়। আরব ও আজমের প্রসিদ্ধ ব্যক্তিত্বদের সফরের বর্ণনা, অনুভূতির সংযোজন গ্রন্থটিকে নিছক ইতিহাসগ্রন্থ থেকে একপ্রকার দলিল-সাহিত্যিক রূপ দিয়েছে।


অষ্টম ও নবম অধ্যায়কে বলা যায় এই বইয়ের হৃদয়। দারুল উলুমের আকাবির, শিক্ষক, শুরা সদস্য ও ফারেগিনদের জীবন ও কর্ম এখানে সযত্নে লিপিবদ্ধ হয়েছে। দায়িত্বশীল, অল্পকালীন শিক্ষক, প্রতিষ্ঠাতা—সকলকেই আলাদাভাবে গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে। এতে পাঠক ইতিহাস শুধু আলোচিত নামগুলোরই নয়, নেপথ্যের সেই অজানা নক্ষত্রদেরও চিনতে পারবেন।


আরও একটি বিশেষ দিক হলো হিজরি ও খ্রিষ্টাব্দের সমন্বয়। ইতিহাসচর্চায় তারিখগত বিভ্রান্তি অনেক সময় পাঠককে বিপদে ফেলে। সেই সমস্যা দূর করতে প্রতিটি ঘটনার ক্ষেত্রে উভয় ক্যালেন্ডার ব্যবহার করা হয়েছে বইটিতে। এতে পাঠকগণ বিভ্রান্তি থেকে মুক্তি পাবেন। গ্রন্থ ও অনুবাদের ভাষা ও উপস্থাপন ভঙ্গি অতি প্রাঞ্জল ও পরিমিত। কোথাও অহেতুক দীর্ঘায়িত নয়, আবার কোথাও অতিরিক্ত সংক্ষিপ্ত নয়। অতিরিক্ত বাহুল্য এড়িয়ে নির্ভরযোগ্য ইতিহাস উপস্থাপন করাই যেন ছিল মূল উদ্দেশ্য। সেই লক্ষ্য বইটিতে পূর্ণ সফলতার সঙ্গে অর্জন করেছেন।


দারুল উলুম দেওবন্দ গ্রন্থটি কেবল একটি প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস নয়, দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিম সমাজের দ্বীনি জাগরণ, আত্মত্যাগ এবং অবিচল সাধনার ইতিহাস। পাঠকদের কাছে এটি হবে তথ্য, প্রেরণা এবং আত্মপরিচয়ের এক নির্ভরযোগ্য ভাণ্ডার। দারুল উলুম দেওবন্দের এই সফল অগ্রযাত্রা বুঝতে চাইলে বইটি হবে অব্যর্থ সহচর।


অনুবাদ : দারুল উলুম দেওবন্দ

সম্পাদক : মাওলানা বাহাউদ্দিন যাকারিয়া হাফি.


অনুবাদকবৃন্দ : 

√মাওলানা ওয়ালী উল্লাহ আরমান সাহেব

√মুফতি জাবির হোসাইন কাসেমী সাহেব

√মুফতি শফি কাসেমী সাহেব 

√মাওলানা শাহ আহমদ সাঈদ সাহেব

√মাওলানা সাইফুদ্দিন ইউসুফ ফাহিম সাহেব

√মাওলানা ফখরুল হাসান সাহেব

√মাওলানা মুহাম্মদ জুবায়ের

সাহেব


নিউজ কমেন্ট করার জন্য প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে লগইন করুন

Copyright © 2025. All right reserved OnlinePress24
Theme Developed BY Global Seba