- প্রথম পাতা
- অপরাধ
- অর্থনীতি
- আইন আদালত
- আন্তর্জাতিক
- আবহাওয়া
- ইসলামী বই
- উলামায়ে দেওবন্দ
- এক্সক্লুসিভ
- কৃষি
- খেলাধুলা
- জাতীয়
- জেলা সংবাদ
- ঈশ্বরদী
- কক্সবাজার
- কিশোরগঞ্জ
- কুড়িগ্রাম
- কুমিল্লা
- কুষ্টিয়া
- খাগড়াছড়ি
- খুলনা
- গাইবান্ধা
- গাজীপুর
- গোপালগঞ্জ
- চট্টগ্রাম
- চাঁদপুর
- চাঁপাইনবাবগঞ্জ
- চুয়াডাঙ্গা
- জয়পুরহাট
- জামালপুর
- ঝালকাঠি
- ঝিনাইদহ
- টাঙ্গাইল
- ঠাকুরগাঁও
- ঢাকা
- দিনাজপুর
- নওগাঁ
- নড়াইল
- নরসিংদী
- নাটোর
- নারায়ণগঞ্জ
- নীলফামারী
- নেত্রকোনা
- নোয়াখালী
- পঞ্চগড়
- পটুয়াখালী
- পাবনা
- পিরোজপুর
- ফরিদপুর
- ফেনী
- বগুড়া
- বরগুনা
- বরিশাল
- বাগেরহাট
- বান্দরবান
- ব্রাহ্মণবাড়িয়া
- ভোলা
- ময়মনসিংহ
- মাগুরা
- মাদারীপুর
- মানিকগঞ্জ
- মুন্সীগঞ্জ
- মেহেরপুর
- মৌলভীবাজার
- যশোর
- রংপুর
- রাঙ্গামাটি
- রাজবাড়ী
- রাজশাহী
- লক্ষ্মীপুর
- লালমনিরহাট
- শরীয়তপুর
- শেরপুর
- সাতক্ষীরা
- সাতক্ষীরা
- সিরাজগঞ্জ
- সিলেট
- সুনামগঞ্জ
- হবিগঞ্জ
- তথ্যপ্রযুক্তি
- ধর্ম
- নির্বাচন
- প্রবাস
- বাংলাদেশ
- বিনোদন
- ব্যবসা-বানিজ্য
- রাজনীতি
মুসলিম উম্মাহর ঐতিহ্য ও গৌরবের স্মারক দারুল উলূম দেওবন্দ
- আপডেটেড: রবিবার ০৫ Oct ২০২৫
- / পঠিত : ৯৬ বার

মুসলিম উম্মাহর ঐতিহ্য ও গৌরবের স্মারক দারুল উলূম দেওবন্দ
_গোলাম রসুল
দারুল উলূম দেওবন্দ শুধু একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, বরং এটি একটি আদর্শ, একটি আন্দোলন, একটি ইতিহাস। উপমহাদেশের মুসলমানদের ধর্মীয় জ্ঞানচর্চা, সামাজিক জাগরণ এবং রাজনৈতিক মুক্তিসংগ্রামের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত এ প্রতিষ্ঠান।
১৮৬৬ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের সাহারানপুর জেলার দেওবন্দ এলাকায় এ প্রতিষ্ঠান যাত্রা শুরু করে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে মুসলিম জনমানসে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে এর প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। সেই থেকে আজ পর্যন্ত এটি ইসলামি শিক্ষা ও সংস্কৃতির অন্যতম প্রাচীন এবং গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসাবে বিবেচিত হয়ে আসছে।
ইতিহাসের প্রেক্ষাপট
১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহ, যা ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম হিসাবে পরিচিত, ব্যর্থ হওয়ার পর মুসলমানদের ওপর নেমে আসে নিদারুণ দমন-পীড়ন। মাদ্রাসাগুলো বন্ধ হয়ে যেতে থাকে, ইসলামি চিন্তাবিদরা হয়ে পড়েন কোণঠাসা। সে সময়কার চিন্তাশীল আলেমরা উপলব্ধি করেন, মুসলমানদের মধ্যে ধর্মীয় জ্ঞান ও আদর্শিক দৃঢ়তা ছাড়া, উপনিবেশবাদী শক্তির মোকাবিলা সম্ভব নয়। এ ভাবনা থেকেই দারুল উলূম দেওবন্দের জন্ম। হজরত কাসেম নানুতুবী (রহ.), মাওলানা রশীদ আহমদ গাঙ্গোহী (রহ.) এবং আরও কিছু আলেম ছিলেন এ প্রতিষ্ঠানের মূলভিত্তি স্থাপনকারী। তারা আল কুরআন ও সুন্নাহভিত্তিক বিশুদ্ধ ইসলামি শিক্ষার প্রচার, মুসলমানদের ধর্মীয় চেতনার জাগরণ এবং জাতীয় জীবনে ইসলামি মূল্যবোধ পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষে আজীবন কাজ করেন।
শিক্ষাব্যবস্থা ও আদর্শ
দারুল উলূম দেওবন্দে অনুসৃত শিক্ষানীতি মূলত কুরআন, হাদিস, ফিকহ, আরবি সাহিত্য, দর্শন, যুক্তিবিদ্যা প্রভৃতি বিষয়ের ওপর গঠিত। এ ধারাকে ‘দেওবন্দি মডেল’ বা ‘নিজামি কারিকুলাম’ বলা হয়, যার ভিত্তি মুসলিম ঐতিহ্যের সর্বোচ্চ ধ্যান-ধারণা ও জ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর প্রতিষ্ঠিত।
এখানে শুধু একাডেমিক পড়াশোনাই নয়, বরং আদর্শ, চরিত্র গঠন ও তাযকিয়া (আত্মশুদ্ধি)কেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। ছাত্রদের মধ্যে বিনয়, অধ্যবসায়, আত্মসংযম ও দায়িত্ববোধ গড়ে তোলাই এ শিক্ষাব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য।
ইসলামি সংস্কৃতির প্রসার
দারুল উলূম দেওবন্দ শুধু একাডেমিক প্রতিষ্ঠান নয়, বরং উপমহাদেশে ইসলামি সংস্কৃতির রক্ষক হিসাবে কাজ করেছে। এখান থেকে প্রকাশিত হয়েছে অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ ইসলামি গ্রন্থ, ফতোয়া, গবেষণাপত্র, তাফসির, হাদিস ব্যাখ্যা ও ইসলামি আইনসংক্রান্ত দলিল। দেওবন্দি মতবাদের মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, বিদআতের বিরোধিতা, বিশুদ্ধ তাওহিদ ও সুন্নাহর অনুসরণ।
এ ধারার আলেমরা মুসলমানদের ধর্মীয় ঐতিহ্যকে রক্ষা করতে কুসংস্কার, লোকাচার ও অনৈসলামিক চর্চার বিরুদ্ধেও সোচ্চার ছিলেন। তা ছাড়া আধ্যাত্মিক চিন্তাচর্চার মধ্য দিয়ে একজন মানুষ কীভাবে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারে তা নিয়েও দেওবন্দি ধারার মধ্যে সুফিবাদ ও শরিয়াহর সুন্দর সমন্বয় রয়েছে।
স্বাধীনতা আন্দোলনে ভূমিকা
দেওবন্দ শুধু ধর্মীয় শিক্ষা দিয়েই থেমে থাকেনি, বরং উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ও সাহসি ভূমিকা রেখেছে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে দেওবন্দের আলেমরা ছিলেন সামনের কাতারে। এ ধারার অন্যতম আলেম হজরত শাইখুল হিন্দ মাহমুদ হাসান (রহ.) ‘রেশমি রুমাল আন্দোলন’-এর মাধ্যমে ব্রিটিশদের পতনের লক্ষ্যে গোপন পরিকল্পনা করেছিলেন। এ ছাড়া মাওলানা হুসাইন আহমদ মদানি (রহ.) ছিলেন জাতীয় কংগ্রেসের সক্রিয় কর্মী ও অসহযোগ আন্দোলনের একজন অগ্রগণ্য নেতা। দেওবন্দের রাজনৈতিক অবস্থান ছিল পরিষ্কার : তারা মুসলমানদের একটি স্বাধীন ধর্মীয় ও রাজনৈতিক পরিচয় প্রতিষ্ঠার পক্ষে, কিন্তু সাম্প্রদায়িক বিভাজনের বিপক্ষে। এ কারণে তারা দ্বি-জাতি তত্ত্বের বিরোধিতা করে ভারতীয় জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী ছিলেন।
বিশ্বজুড়ে প্রভাব
দেওবন্দের প্রভাব শুধু ভারতেই সীমাবদ্ধ নয়। পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান এমনকি আরব বিশ্বেও এ ধারার আলেমরা ইসলামি শিক্ষাব্যবস্থা চালু করেছেন। বাংলাদেশে হাটহাজারী মাদ্রাসা, পটিয়া মাদ্রাসা, জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া, জামিয়া কুরআনিয়া লালবাগসহ প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান দেওবন্দি আদর্শে পরিচালিত। আজও বাংলাদেশের লাখ লাখ ছাত্র দেওবন্দি পাঠক্রম অনুযায়ী ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে।
সমকালীন প্রাসঙ্গিকতা
বর্তমান বিশ্বে ধর্মীয় শিক্ষাব্যবস্থা নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। একদিকে আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিস্তার, অন্যদিকে বিভ্রান্তিকর মতবাদ ও উগ্রপন্থার উত্থান ইসলামি শিক্ষাব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এ প্রেক্ষাপটে দারুল উলূম দেওবন্দের ভূমিকা হতে পারে একটি আদর্শ পথনির্দেশক। তাদের শিক্ষা ও চিন্তার গভীরতা, সঠিক ইসলামি মূল্যবোধের অনুশীলন, সমাজ সচেতনতা এবং আত্মিক উন্নয়ন সব মিলিয়ে একবিংশ শতাব্দীর মুসলিম সমাজের জন্য এক উজ্জ্বল বাতিঘর দারুল উলূম দেওবন্দ।
দারুল উলূম দেওবন্দ একটি প্রতিষ্ঠান নয়, এটি একটি ঐতিহাসিক আন্দোলন, যা ধর্মীয় শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং স্বাধীনতার সংগ্রামে এক অবিচ্ছেদ্য অধ্যায় হয়ে আছে। আজও এ প্রতিষ্ঠান থেকে যে আলো ছড়ায়, তা পুরো উপমহাদেশের মুসলমানদের ধর্মীয়, সামাজিক ও নৈতিক জীবনে প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। দেওবন্দ শুধু অতীতের গৌরব নয়, বরং বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্যও এক প্রেরণার উৎস।

নিউজ কমেন্ট করার জন্য প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে লগইন করুন
















