আজঃ শুক্রবার ৩১-১০-২০২৫ ইং || খ্রিষ্টাব্দ

কালিজিরা খেতে কেন বলেছেন নবীজি (সা.)

  • আপডেটেড: বৃহস্পতিবার ৩০ Oct ২০২৫
  • / পঠিত : ১৪ বার

কালিজিরা খেতে কেন বলেছেন নবীজি (সা.)

নবীজির (সা.) হাদিসে কালিজিরাকে বলা হয়েছে ‘সব রোগের ওষুধ’। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এর নাম Nigella sativa, আরবিতে হাব্বাতুস সাওদা (الحَبَّةُ السَّوْدَاءُ)। এটি একাধারে খাদ্য, ওষুধ ও প্রতিষেধক। নবীজির বাণী আজ আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের কাছে প্রমাণিত সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কালিজিরা খাও, এতে মৃত্যু ছাড়া সব রোগের আরোগ্য আছে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৬৮৮; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২২১৫)

যদিও কোরআনে সরাসরি কালিজিরার নাম উল্লেখ নেই, তবে আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি প্রতিটি রোগের জন্য নিরাময় সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা শু‘আরা, আয়াত: ৮০)

প্রাকৃতিক উপাদানে আল্লাহ নিরাময়ের গুণ রেখেছেন, কালিজিরা সেই নিরাময়ের এক অনন্য উদাহরণ।

নবীজির (সা.) খাদ্যাভ্যাসে কালিজিরার স্থান

নবীজি (সা.) সাধারণ জীবন যাপন করতেন। তিনি খেজুর, যব, মধু, দুধ, কালিজিরা ও অলিভ তেল নিয়মিত ব্যবহার করতেন। কালিজিরা ছিল তাঁর ঘরোয়া চিকিৎসার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। হাদিসে এসেছে, আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি নবীজিকে বলতে শুনেছি, কালিজিরায় মৃত্যু ছাড়া সব রোগের নিরাময় রয়েছে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৬৮৮)

এই হাদিসে ‘মৃত্যু ছাড়া সব রোগের আরোগ্য’ কথাটি বোঝায় যে আল্লাহ তাআলা কালিজিরায় এমন প্রাকৃতিক গুণ রেখেছেন, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা জাগ্রত করে। তবে এটি চিকিৎসার বিকল্প নয়, বরং প্রাকৃতিক প্রতিষেধক ও পরিপূরক খাদ্য।

চিকিৎসায় কালিজিরার উপকারিতা

তিব্বে নববী বা প্রফেটিক মেডিসিনে কালিজিরাকে বলা হয়েছে ‘উপশমের মূল উপাদান’। ইবনে কাইয়্যিম (রহ.) লিখেছেন, ‘কালিজিরা ঠান্ডা-গরম দুই ধরনের রোগেই উপকারী; এটি পেট পরিষ্কার করে, ক্ষুধা বাড়ায়, এবং শরীরকে জীবনীশক্তি প্রদান করে।’ (আয-যাদুল মা‘আদ, ৪/৩০২, মাকতাবা দারুল হাদিস, কায়রো সংস্করণ)

আধুনিক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, কালিজিরা শুধু প্রাচীন চিকিৎসায় নয়, বরং আধুনিকমেডিকেল সায়েন্সেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

১. রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি: কালিজিরায় থাকে থাইমোকুইনোন, যা শরীরের ইমিউন সিস্টেম সক্রিয় করে।

২️. প্রদাহনাশক গুণ: এই উপাদান শরীরের অভ্যন্তরীণ প্রদাহ কমিয়ে ব্যথা উপশমে সহায়তা করে।

৩️. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে: কালিজিরা ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমায়।

৪️. ক্যানসার প্রতিরোধে ভূমিকা: বহু গবেষণায় দেখা গেছে, থাইমোকুইনোন ক্যান্সার সেলের বৃদ্ধি রোধ করে।

৫️. হৃদরোগ প্রতিরোধ: কালিজিরা রক্তে কোলেস্টেরল কমায়, হৃদ্‌যন্ত্রকে শক্তিশালী করে।

৬️. শ্বাসযন্ত্রের রোগে কার্যকর: হাঁপানি, কাশি ও সর্দিতে কালিজিরার তেল বিশেষ উপকারী বলে প্রমাণিত।

কীভাবে খাবেন

আধুনিক চিকিৎসক ও গবেষকদের মতে, ‘কালিজিরা শরীরে প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিকের মতো কাজ করে, কিন্তু ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।’

১️. সকালে খালি পেটে আধা চা–চামচ কালিজিরা খাওয়া যেতে পারে।

২️. এক চা–চামচ মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়।

৩️. ঠান্ডা বা সর্দি লাগলে কালিজিরার তেল গরম পানির সঙ্গে কয়েক ফোঁটা দিয়ে ব্যবহার করা যায়।

৪️. তবে গর্ভবতী নারী বা গুরুতর অসুস্থ রোগীকে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

নবীজি (সা.) আমাদের শুধু আধ্যাত্মিক জীবন নয়, শারীরিক স্বাস্থ্যেরও দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। কালিজিরা তাঁর শিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক বাস্তবতার এক উজ্জ্বল মিলনবিন্দু। চিকিৎসাবিজ্ঞানও বলছে, কালিজিরা সত্যিই ‘প্রকৃতির অলৌকিক বীজ’; যা মানুষের দেহ, মন ও আত্মাকে সঞ্জীবিত করতে পারে।


 

ট্যাগস :


নিউজ কমেন্ট করার জন্য প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে লগইন করুন

Copyright © 2025. All right reserved OnlinePress24
Theme Developed BY Global Seba