আজঃ শুক্রবার ৩১-১০-২০২৫ ইং || খ্রিষ্টাব্দ

বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ডে আমদানি-রপ্তানিতে ১ বিলিয়ন ডলারের প্রভাব পড়ার শঙ্কা

  • আপডেটেড: রবিবার ১৯ Oct ২০২৫
  • / পঠিত : ২৫ বার

বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ডে আমদানি-রপ্তানিতে ১ বিলিয়ন ডলারের প্রভাব পড়ার শঙ্কা

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে দেশের আমদানি-রপ্তানি খাতে এক বিলিয়ন (১,০০০ কোটি) ডলারেরও বেশি প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা।


যদিও ক্ষতির সঠিক পরিমাণ এখনো নির্ধারণ করা যায়নি, তবে পোশাক রপ্তানিকারক ও আমদানিকারক সংগঠনগুলোর নেতারা জানিয়েছেন, সরাসরি ও পরোক্ষ উভয় ধরনের ক্ষতি বিবেচনায় এই অঙ্ক এক বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।

বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল এয়ার এক্সপ্রেস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কবির আহমেদ খান বলেন, এখনই ক্ষতির সঠিক হিসাব দেওয়া কঠিন। তবে সামগ্রিকভাবে আমদানি-রপ্তানির ওপর এর প্রভাব এক বিলিয়ন ডলারের বেশি হবে বলে আমরা আশঙ্কা করছি।

তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানিকারক ও বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, রপ্তানিতে আমাদের ক্ষতি এক বিলিয়ন ডলারেরও বেশি হতে পারে।

তিনি বলেন, ক্ষতির মধ্যে রয়েছে-কারখানার কাঁচামাল আমদানিতে বিলম্ব, বিকল্পভাবে ব্যয়বহুল এয়ার শিপমেন্ট, ক্রেতাদের ছাড় দাবি, এমনকি সময়মতো নমুনা পৌঁছাতে না পারায় অর্ডার বাতিলের আশঙ্কা।

তিনি আরও বলেন, ধরা যাক, আমার হয়তো ২ হাজার ডলারের এক্সেসরিজ পুড়ে গেছে। কিন্তু এই ক্ষুদ্র উপকরণ না থাকায় ২ লাখ ডলারের রপ্তানি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এসব পণ্য দ্রুত চাহিদা মেটাতে বিমানপথে আনা হয়, যা এখন পুনরায় আমদানিতে সময় ও খরচ দুটোই বাড়াবে।

বিকেএমইএর তথ্য অনুযায়ী, শুধু পোশাক খাতেই পাঁচশোর বেশি রপ্তানিকারকের ছোট ছোট চালান কার্গো ভিলেজে ছিল। এ ছাড়া, ওষুধশিল্প, কৃষিপণ্য ও ইলেকট্রনিক্স খাতের কাঁচামালও সেখানে সংরক্ষিত ছিল।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, শনিবার আমরা সদস্যদের ইমেইল করে জানাতে বলেছি, কার্গো এলাকায় কার কার পণ্য ছিল, কতটা ক্ষতি হয়েছে। এখনো পুরো চিত্র পরিষ্কার নয়।

তিনি বলেন, আমার নিজেরও কিছু মেশিনারি ও এক্সেসরিজ ওই এলাকায় ছিল। যদি তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে রপ্তানি ক্ষতি কয়েক লাখ ডলার ছাড়াতে পারে।

বিজিএমইএর সহসভাপতি মো. শহাব উদ্দুজা চৌধুরী বলেন, বিমানবন্দরের কার্গোতে থাকা আমদানি ও রপ্তানি পণ্যের অন্তত এক-তৃতীয়াংশই তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল খাতের। ফলে এই অগ্নিকাণ্ড বিদেশি ক্রেতাদের মধ্যেও উদ্বেগ তৈরি করেছে।

বর্তমানে ৬০টির বেশি আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিস বাংলাদেশে কার্যক্রম চালাচ্ছে। তাদের অনেকেরই দলিলপত্র ও পার্সেল ওই কার্গো ভিলেজের মাধ্যমে আদান-প্রদান হয়।

রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান জেমটেক্স লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমরান আহমেদ বলেন, ভারত থেকে আনা প্রায় ৪০ কেজি লেইস এক্সেসরিজ কার্গো ভিলেজে ছিল। সেগুলো প্রায় নিশ্চিতভাবে পুড়ে গেছে।

তিনি বলেন, এগুলো দিয়ে আমি ১ লাখ ৬২ হাজার ডলারের রপ্তানি সম্পন্ন করতাম। নির্ধারিত তারিখে পণ্য পাঠাতে না পারায় সেই অর্ডার বাতিল হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

এক ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির প্রতিনিধি জানান, তাদের প্রায় ৭৫ হাজার ডলারের কাঁচামাল অগ্নিকাণ্ডে ধ্বংস হয়েছে। বৃহস্পতিবার পণ্য ছাড় করার কথা ছিল, এর আগেই পুড়ে গেছে সবকিছু।


২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। এমন পরিস্থিতিতে বিমানবন্দর কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি রপ্তানি প্রবাহ ও ক্রেতা আস্থায় বড় ধাক্কা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছে ব্যবসায়ীরা।

বিকেএমইএ এবং এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, কার্গো ভিলেজের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আগুন লাগা শুধু নিরাপত্তার প্রশ্নই নয়, এটি বিদেশি ক্রেতাদের আস্থার বিষয়ও। সরকারকে অবশ্যই দ্রুত তদন্ত ও ক্ষতিপূরণ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।

ট্যাগস :


নিউজ কমেন্ট করার জন্য প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে লগইন করুন

Copyright © 2025. All right reserved OnlinePress24
Theme Developed BY Global Seba